অসাধু ব্যবসায়ীরা এসময় মা ইলিশ শিকার করে লবন দিয়ে সংরক্ষণ করে রাখে। কারণ নিষেধাজ্ঞার সময় বরফ কল বন্ধ থাকে বলে বরফ পাওয়া যায় না। নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ায় পর প্রশাসনের সামনেই লোনা ইলিশ নামে সেসব ইলিশ বিক্রি হচ্ছে।
মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, ‘ইলিশ মাছ সারা বছর ডিম ছাড়লেও বছরের এ সময়টাতে প্রায় ৮০ শতাংশ ডিম ছাড়ে।’ তাই, ইলিশের প্রজনন রক্ষার জন্য ইলিশ নিধন, পরিবহন ও বাজারজাতকরণের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
তবে, মা ইলিশ রক্ষায় প্রশাসনের অভিযানের মধ্যেও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গভীর রাতে গোপনে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার এলাকায় ব্যাপক হারে মাছ ধরা হয়েছে।
নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর থেকেই চাঁদপুর মাছঘাটে হিমায়িত প্রচুর ইলিশ বাজারে আসছে। সেই সাথে আসছে মণে মণে লোনা ইলিশও।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, এসব ইলিশ সরকারের দেয়া বাইশ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়ে অসাধু জেলেরা মাছ ধরে লুকিয়ে বিক্রি করে আড়তদারদের কাছে। এর সাথে জড়িত নদী পাড়ের আড়তদাররা একটি সিন্ডিকেট করে এগুলো কিনে নিকটবর্তী চর এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে মাছের আঁশ ছাড়িয়ে কেটে কেটে লবন দিয়ে গোপনে সংরক্ষণ করে রাখে। নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়ে অবৈধভাবে ধরা এসব রুপালী মা ইলিশকে লোনা ইলিশে রূপান্তর করে তারা। পরে নিষেধাজ্ঞা শেষ হলে, তা বিক্রি করার জন্য প্রকাশ্যে নিয়ে আসছে এর সাথে জড়িত সিন্ডিকেট।
ইলিশের রাজধানী খ্যাত চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছঘাটে লোনায় রূপান্তর করা মা ইলিশ ও ডিমওয়ালা মাছের পেট কেটে ডিম বের করে সেই ডিমও ঘাটের চিহ্নিত ৫/৭টি আড়তে গত কয়েকদিন ধরে কেনা-বেচা করতে দেখা যায়।
প্রতি মণ ৫ হাজার টাকা থেকে ১৯ হাজার টাকা দরে কিনে এসব লোনা ইলিশ প্রক্রিয়াজাত করে নিজেদের এলাকায় নিয়ে যাচ্ছেন চট্টগ্রাম, জামালপুর, শেরপুর, নালিতাবাড়ির ৩০/৩৫ জন পাইকারি লোনা ইলিশ ব্যবসায়ীরা।
প্রতি কেজি লোনা ইলিশের ডিম ৪শ’ থেকে ১১শ’ টাকা ধরে এসব লোনা ইলিশের ডিম কিনছেন বলে জানান শেরপুর থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম।
ইলিশ বিশেষজ্ঞরা জনান, গত ২২ দিন বিরতির পর বাজারে ইলিশের যে চিত্র দেখা যাচ্ছে তাতে এটাই স্পষ্ট হয়েছে যে, নিষেধাজ্ঞার সময় মা ইলিশ ধরা থেমে থাকেনি। এসময়েও ধূর্ত ও লোভী জেলেরা অনেক মা ইলিশ ধরেছেন। যার ফলে ইলিশের বংশ বিস্তার মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে।
নদীর সব দিকের জেলেরা ব্যাপকহারে মা ইলিশ নিধন করায় জেলে-আড়তদাররা লাখ লাখ টাকা কামিয়ে নিয়েছেন, দাবি তাদের।
অনেকের সাথে আলাপ করে জানা যায়, ‘এসব এলাকায় নিষেধাজ্ঞার সময়ে মা ইলিশ নিধন অনেকের বাড়তি টাকা উপার্জন ও আয়ের প্রধান উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে।’